এটি সেচ্ছাসেবামুলক সংগঠন।আমদের কাজ সমাজের উন্নয়ন।।.এবং লেখা কিছু বৈজ্ঞানিক সমাজ গবেষণা।

Latest News:

Monday, August 31, 2015

                                   

                                  মানসিক ব্যাধি! its selfie



নিজস্বী বা সেলফি (সেল্ফি) হলো আত্ম-প্রতিকৃতি আলোকচিত্র বা দল আলোকচিত্র, যা সাধারণত হাতে-ধরা ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করে নেয়া হয়. সেলফি প্রায়ই ফেসবুক, গুগল + +, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টাম্বলার এবং টুইটারে ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা হয়ে থাকে.
সেলফি শব্দটি প্রথম এসেছে ইংরেজি সেলফিশ থেকে. সেলফি অর্থ প্রতিকৃতি. অক্সফোর্ড অভিধানের মতে, সেলফি হল একটি ছবি (আলোকচিত্র) যা নিজের তোলা নিজের প্রতিকৃতি, যা সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যামে ধারণকৃত এবং যে কোনো সামাজিক মাধ্যমে আপলোড (তুলে দেয়া) করা হয়ে থাকে. বেশিরভাগ সেলফি হাত সামনে তুলে বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, কখনো-কখনো সেল্ফ টাইমার ব্যবহার করেও নেয়া হয়.

রবার্ট কর্ণিলিয়াস, একজন মার্কিন অগ্রণী আলোকচিত্রী, যিনি 1839 সালে নিজের একটি দাগেররোতীপ্ বা আত্ম-প্রতিকৃতি ক্যামেরায় ধারণ করেন, যা ছিল প্রথম কোন একজন ব্যক্তির আলোকচিত্র.

1900 সালে পোর্টেবল কোডাক ব্রাউনি বক্স ক্যামেরা বাজারে আসার পর ফোটোগ্রাফিক আত্ম-প্রতিকৃতি তোলা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে. বহনে সহজ এই ক্যামেরার সাহায্যে আয়নার মাধ্যমে সেলফি তোলার প্রচলন শুরু হয় তখন থকেই.

সেলফি শব্দটির প্রাথমিক ব্যবহার ২00২ এর আগে পাওয়া গেলেও, ২00২ সালের 13 ই সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ান এক অনলাইন ফোরামে (এবিসি অনলাইন) প্রথম ব্যাবহৃত হয়. 

ফেসবুক এর আগের সময়টায় মাইস্পেস বেশ জনপ্রিয় ছিল. এবং সে কারনেই সেলফি সর্ব প্রথম জনপ্রিয়তা পায় সেখানেই. তারপর ফেসবুক জনপ্রিয় হওয়ার পর অনেক দিন পর্যন্ত সেলফি নিম্ন রুচির পরিচায়ক ছিল. [কারন তখন বেশিরভাগ সেলফি গুলো বাথরুমের আয়নার সামনে তোলা হত.] তবে শুরু থেকেই ইমেজ শেয়ারিং সাইট ফ্লিকার এ জনপ্রিয় ছিলো সেলফি. তবে তখনকার দিনের সব সেলফি গুলোই টিন এজ মেয়েরা আপলোড করত. প্রাথমিক অবস্থায় তরুণদের মধ্যে সেলফি অধিক জনপ্রিয়তা পেলেও বর্তমানে এটি সমাজের সকল স্তরে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে. ২01২ সালের শেষের দিকে টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে 'সেলফি' শব্দটি বছরের আলোচিত সেরা দশ শব্দের অন্যতম শব্দ হিসাবে বিবেচিত হয়. ২013 সালের জরিপ অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ান মহিলাদের দুই তৃতীয়াংশই (যাদের বয়স 18-35) ফেসবুকে শেয়ারের উদ্দেশে সেলফি তুলেছেন. স্মার্টফোন এবং ক্যামেরা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এর জরিপ প্রতিবেদন বলছেঃ 18-২4 বছর বয়েসি মানুষের তোলা ছবির 30% ই সেলফি. ২013 সালে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির অনলাইন ভার্সনে 'সেলফি' শব্দটি নতুন সংযোজিত হয়. স্মার্টফোনের কল্যানে গত এক বছরে বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে সেলফি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে.


ফেসবুক এবং ফেসবুকের লাইক কমেন্টের জন্য বর্তমানে সেলফি ব্যবহৃত হয়, এটা একটা ব্যাধিতে পরিনত হইয়েছে কারন অনেকে মনে করে ফেসবুকের নিজের সেলফিতে যত লাইক কমেন্ট বেশি হবে তত তার জনপ্রিয়তা বেশি হবে ।অনেকে তার সেলফিতে লাইক না দিলে ফেসবুক ফ্রেন্ডদের আনফ্রেন্ড করে দেয়। এটা অনেক সময় অহংকার ঘৃনিত ও হিন্সাত্তক প্রবৃতি সৃষ্টি করে ,অনেকে এটা অনেক সময় হাস্যকার পরিস্তিতি হয়,যেমন তার সেলফিতে লাইক কমেন্টের জন্য আকুতি মিনতি শুরু করে যা অনেক টা বিভ্রান্তি ছড়ায়।।


"Facebook and the Facebook comment selaphi currently is used for, it becomes a disease that did all this because there are many Facebook likes as his selaphite comment will be higher than the popularity of the Facebook friends anaphrenda People do not like it that his selaphite. It creates a lot of pride ghrnita and hinsattaka prabrti, many hasyakara .Paristitira it is a lot of time, such as the desire for mentioning his selaphite Like many at the start pleaded confusion" ..

আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে অথচ সেলফি পোস্ট করেন না, তাহলে আপনি ‘খেত’। না, এটা আমার কথা নয়, আজকাল অনেক তরুণ-তরুণীর ধারণা এরকমই। তাই যেখানে যান, যা-ই করেন সঙ্গে একটা সেলফি তুলে পোস্ট করুন ফেসবুকে।

সেলফি-ম্যানিয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কেউ কেউ তো হাসপাতালের বেডে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন- ফিলিং পেইনড। সড়ক দুর্ঘটনায় কোনোরকমে বেঁচে গিয়ে ভাঙা গাড়ির সঙ্গে সেলফি তুলে লিখেন- ফিলিং ব্লেজড। পড়তে, লিখতে, হাঁটতে, খেলতে, রান্না করতে, কাজ করতে গিয়ে সেলফি তোলা তো একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল।

অনেকে প্রতিদিন সেলফি আপলোড করে ফেসবুকের সামনে বসে থাকেন কয়জন লাইক এবং কমেন্ট করে তা গুণতে।কে কী কমেন্ট করল তা দেখতে, আর রিপ্লাই দিতে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাছের মানুষদের কেউ কমেন্ট না করলে তো তার ওপর অভিমান, এমনকি ঝগড়াও হয়।

অফিসে কাজ ফেলে সেলফি তুলে পোস্ট করতে আর লাইক-কমেন্ট গুণতেও দেখেছি অনেক
        স্মার্টফোনে বার বার নিজের ছবি তুলে দেখেন? গবেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, স্মার্টফোন সেলফি তোলার এই অভ্যাস ভয়ংকর বিপদজনক হতে পারে।
                                                          ( india       speceal selfhi)
মার্কিন গবেষকেরা দাবি করেছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলার অভ্যাসের সঙ্গে মানসিক ব্যাধির সম্পর্ক থাকতে পারে। নিজের চেহারা প্রতি আকর্ষণ অনুভব করা মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ) সম্প্রতি মানসিক ব্যাধির সঙ্গে সেলফি তোলার সম্পর্কের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শিকাগোতে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক পরিচালনা পর্ষদের সভায় সেলফির সঙ্গে মানসিক ব্যাধির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। গবেষকেরা দাবি করেছেন, অতিরিক্ত নিজের ছবি তোলার প্রবণতা এবং সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে দেওয়ার এই মানসিক সমস্যার নাম ‘সেলফিটিস’।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, ব্যাধিটির তিনটি স্তর হতে পারে। প্রথম স্তরটি ‘বর্ডার লাইন সেলফিটিস’। মানসিক সমস্যার এই পর্যায়ে দিনে তিনবার নিজের ছবি তুলে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের সাইটে তা পোস্ট না করা। দ্বিতীয় স্তরটি হচ্ছে ‘অ্যাকিউট সেলফিটিস’। এই পর্যায়ে দিনে অন্তত তিনটি নিজের সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে তিনটি সেলফিই পোস্ট করা হয়। শেষ স্তরটি হচ্ছে ‘ক্রনিক সেলফিটিস’। এ পর্যায়ে নিজের সেলফি তোলা রোধ করা যায় না। দিনে অন্তত ছয়বার সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের সাইটে পোস্ট করতে দেখা যায়। এ ছাড়া বারবার নিজের ছবি তোলার প্রবণতা থাকে ক্রনিক সেলফিটিস পর্যায়ে।
গবেষকেরা এই মানসিক সমস্যার আপাতত কোনো সমাধান নেই বলেই জানিয়েছেন। তবে সাময়িক চিকিত্সা হিসেবে কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি (সিবিটি) কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। মানসিক রোগের চিকিত্সকেরা দাবি করছেন, অতিরিক্ত সেলফি তোলার সঙ্গে নার্সিসিজম ও আসক্তিরও সম্পর্ক থাকতে পারে। গবেষক ডেভিড ভিল জানিয়েছেন, বডি ডিসফরমিক ডিজঅর্ডারে ভুক্তভোগী দুই তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রেই সেলফির সম্পর্ক দেখেছেন তিনি।
কিছু শেলফি...
some selfie








Friday, August 7, 2015

সুখ কারে বলে?




সুখ একটি মানবিক অনুভুতি. সুখ মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়. [1] জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, দর্শনভিত্তিক এবং ধার্মিক দিক থেকে সুখের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এর উৎস নির্ণয়ের প্রচেষ্টা সাধিত হয়েছে. সঠিকভাবে সুখ পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন. গবেষকেরা [২] একটি কৌশল উদ্ভাবন করেছেন যা দিয়ে সুখের পরিমাপ কিছুটা হলেও করা সম্ভব. মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা তাত্ত্বিক মডেলের ভিত্তিতে সুখ পরিমাপ করে থাকেন. এই মডেলে সুখকে ইতিবাচক কর্ম ও আবেগসমূহের সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা হয়. এছাড়া এক্ষেত্রে তিনটি বিশেষ অবস্থাকেও বিবেচনা করা হয়: আনন্দ, অঙ্গীকার এবং অর্থ.গবেষকগণ কিছু বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করেছেন যেগুলো সুখের সাথে পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত: বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক, বহির্মুখী বা অন্তর্মুখী অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, আশাবাদ, ধর্মীয় সম্পৃক্ততা, আয় এবং অন্যান্য সুখী মানুষের সাথে নৈকট্য.

সুখ কি?
সুখ- এর জৈবিক সংজ্ঞা : কোন স্টিমুলাস বা উত্তেজকের প্রতি আমাদের মস্তিষ্কের রাসায়নিক ও স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া যা আমাদের ভেতর সুখের অনুভব তৈরী করে
আবিষ্কৃত রাসায়নিক যৌগ "এন্ডরফিন্স" গুলোকেই এই "সুখের" মূল বলে বিভিন্ন গবেষনায় জানা যায় এখন ঘটনা হইলো, এন্ডো মানে হইলো ভিতরের আর মরফিন মানে বেদনা নাশক তার মানে কি দাড়াইলো ? সুখের রাসায়নিক শরীরের ভিতরের বেদনাকে কিংবা অসুখের অবস্থাকে পরিবর্তন করে সুখের অবস্থায় নিয়ে যায়
ক্ষুধা পেলে সুস্বাদু খাবার আমাকে সুখ দেয়, সুখ দেয় প্রিয় মানুষের চুম্বন। প্রিয় দেশের জয় আমাকে সুখ দেয়, সুখ দেয় পড়ন্ত বিকেলের রোদ। সুখের অনুভবকে বিশ্লেষন করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা তাই ইন্দ্রিয়কে অনুসন্ধান করেছেন, মানবের মস্তিষ্ককে কেটে ছিড়ে দেখেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন - সুখের স্টিমুলাস বা উত্তেজক শরীরের বাহির থেকে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ভেতরে আসুক, অথবা ভিতরের কোন এক উৎস থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছাক - সুখ আসলে শেষ পর্যন্ত কিছু জৈব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ।
জীবণে সবাই সুখী হতে চায়, কিন্তু, কেউ কি একজন সুখী মানুষের ছবি চিএপটে তুলতে পারবেন? না, আমরা কেউ পারব না আশ্চর্য, কি অদ্ভূত অক্ষমতা!!! আসলে সুখ কি? সন্তুষ্টি, আনন্দ, হাসি, তৃপ্তি, সাফল্য, সমৃদ্ধি, সম্মান, স্বীকৃতি, ভালবাসা, যত্ন -এগুলো কি সুখের অবয়ব? কি দিয়ে সুখের ছবি আঁকা যায়? আমি সুখ খুঁজি অনুভূতিতে, ভাবনায়, না পাওয়ার এ পৃথিবীতে কিছু পাওয়ার মাঝে হয়তোবা, অন্যরা ভাববে ভাবুক মানুষ, ভাবনায় সুখ খুঁজে নেন জীবণের চৌহদ্দিতে কোন চমক নেই, কোন অর্জন নেই, তারপরেও ভাবে সুখী এখানেই জীবণের বৈচিএ্য একেক মানুষ একেক ভাবে দেখে
সুখ কি প্রজাপতি, প্রেয়সীর মিস্টি হাসি, ভোর রাতের মিস্টি স্বপ্ন, চায়ের কাপে উষ্ণ চুমুক, কর্মব্যস্ত দিনের শেষে রবীন্দ্রসংগীত, রিমঝিম বৃস্টির শব্দ, তপ্ত সন্ধ্যায় দক্ষিণা বাতাসের আলতো ছোঁয়া, মুঠো ফোনের সেই রিংটোনটি, জোৎস্না রাতে রূপালী আলোর বন্যা, কিন্নরীর সুর, অপেক্ষার অকস্মাৎ অবসান, নিস্পলক দৃস্টি, অপ্রশস্ত বারান্দায় পদচারিতার পদধ্বনি? আসলে কি জানেন, সুখ আপনার খুব কাছাকাছি বসবাস করে, খুঁজে নিতে হয় তাকে, আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তাকে লালন করতে হয় সুখ সোনার হরিণ নয় আমি সুখী দু:খ আমায় ছোঁয় না এরকম প্রত্যয়ী ভাবনায় জীবণ সাজাতে পারলেই সুখ নামক পাখিটি বাস করবে প্রতিটি জীবণে আমার আজকের সকালের নিস্তরঙ্গতায় তাই সুখের শান্তিধারা বইছে আসুন, আমরা সুখ পাখিটাকে মনের খাঁচায় বন্দী করে তাকে লালন করি আমৃতু্য
"...আজি বহিতেছে
প্রাণে মোর শান্তিধারা
মনে হইতেছে
সুখ অতি সহজ সরল, কাননের
প্রস্ফুট ফুলের মতো, শিশু-আননের
হাসির মতন, পরিব্যাপ্ত, বিকশিত,
উন্মুখ অধরে ধরি চুম্বন-অমৃত
চেয়ে আছে সকলের পানে বাক্যহীন
শৈশববিশ্বাসে চিররাএি চিরদিন

বিশ্ববীণা হতে উঠি গানের মতন
রেখেছে নিমগ্ন করি নিথর গগন

সে সংগীত কী ছন্দে গাঁথিব! কি করিয়া
শুনাইব, কী সহজ ভাষায় ধরিয়া
দিব তারে উপহার ভালোবাসি যারে,
রেখে দিব ফুটাইয়া কী হাসি-আকারে
নয়নে অধরে, কী প্রেমে জীবনে তারে
করিব বিকাশ! সহজ আনন্দখানি
কেমনে সহজে তারে তুলে ঘরে আনি
প্রফুল্ল সরস! কঠিন-আগ্রহ-ভরে
ধরি তারে প্রাণপণে-মুঠির ভিতরে
টুটি যায়! হেরি তারে তীব্রগতি ধাই_
অন্ধবেগে বহুদূরে লঙ্ঘি চলি যাই,
আর তার না পাই উদ্দেশ\
চারি দিকে
দেখে অজি পূর্ণপ্রাণে মুগ্ধ অনিমিখে
এই স্তব্ধ নীলাম্বর, স্থির শান্ত জল_
মনে হল, সুখ অতি সহজ সরল\

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  1. সুখ সম্পর্কে জ্ঞানিদের কিছু বানি ঃ- মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, সে ততটাই হতে পারে। সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি । আব্রাহাম লিংকন                                              
  1. একটি সুখের সংসার ধ্বংস করার জন্য শয়তান যতগুলো অস্ত্র আবিস্কার করেছে তার মধ্যে মারাত্নক অস্ত্র স্ত্রীর ঘ্যনর ঘ্যানর

    ডেল ক্যার্নেগি      
  2.   
    আমি জ্ঞানী নই, কিন্তু ভাগ্যবান কাজেই আমি সর্বতোভাবে সুখী

    ডব্লিউ জি নেহাম
  3.      একজন সুখী মানুষ সাদা কাকের মতোই দুর্লভ

    জুভেনাল
  4.    বৃক্ষের সার্থকতা যেমন ফল ধারণে সেইরকম নৈতিক গুনাবলীর সার্থকতা শান্তি লাভে। চরম ও পরম শান্তি লাভের পথ হচ্ছে ক্রমাগত সৎ জীবনযাপন করা।

    আল ফারাবি
  5.    
    আমি সবসময় নিজেক সুখী ভাবি, কারণ আমি কখনো কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করাটা সবসময়ই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়

    উইলিয়াম শেক্সপিয়র
  6.   লাজুক ধরনের মানুষ বেশীর ভাগ সময়ই মনের কথা বলতে পারেনা। মনের কথা হড়বড় করে বলতে পারে শুধু মাত্র পাগলরাই। পাগলরা মনে হয় সেই কারণেই সুখী।

    হুমায়ূন আহমেদ
  7. এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
 quantummethodঃ- এর মতে সুখ

সুখ এই কথাটার আসল অর্থ কি? কাকে আমরা সুখ বলে ভাবি? কী সেটা?
রাতদিন আমরা বলে ফিরি, এ জীবনে সুখ পেলাম না, আমার কপালে সুখ নাই, জন্মের পর থেকে সুখের মুখ দেখলাম না, এমন আরও কত কি! কিন্তু আমরা কি জানি সুখ মানে কী বা কোথায় আছে সুখ?
সুখকে আমরা যে যার মতো করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি। কেউ ভাবি এটা পেলে সুখী হতাম, কেউ ভাবি ওটা পেলে সুখ পেতাম। একেকজনের ভাবনা একেক রকম।
একজন ব্যবসায়ী কী চায়? টাকা। সে ভাবে যদি এক কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট পেতাম বা টেন্ডারটা যদি মিলে যেত, তবে আমার মতো সুখী আসলেই কেউ হতো না। যারা চাকরিজীবি তারা চায় বেতন বাড়ুক বা প্রমোশন হোক।
একজন গৃহিণীর চাওয়া পাওয়ার হিসেবটা আবার অন্যরকম। সে চায় শাড়ি গয়না, নিজের একটা সংসার। কেউ জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকলে ভাবতে থাকে, কবে হবে নিজের একটা ছোট্ট সংসার। তা না হলে আমার সুখ নাই।
সন্তান চায় স্বাধীনতা। তারা ভাবে আর কতদিন বাবা মায়ের শাসনে থাকতে হবে।
অর্থাৎ আমরা যে যার মতো করে শুধু চেয়েই যাচ্ছি অবিরত। কেউ কেউ সেই চাওয়াগুলোকে হয়তো পাওয়াতেও রূপান্তরিত করতে পারছি। কিন্তু তারপর? তারপর কি হচ্ছে? আমরা কি আসলেই সুখী হতে পারছি?
আমি নিজে আজ পর্যন্ত সুখের কোনো ব্যাখ্যা পেলাম না। ছোটবেলায় পছন্দের জামাটা যতক্ষণ না পাচ্ছি দুঃখ নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। পেলেই মনটা আনন্দে মেতে উঠত। আবার পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো হলেও মনের কোণে একটা সুখ সুখ ভাব হতো। এটার নামই কি তাহলে সুখ?
একটু বুঝতে শেখবার পর থেকে সুখের সংসার গড়বার স্বপ্ন দেখেছি। স্বামী সংসার সন্তান এসবের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেবার নাম কি তবে সুখ? একজন মেয়ে তার সমস্ত সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে সংসারের জন্যে সারাটা জীবন হাসি মুখে কাটিয়ে দেয়। কেউ কেউ হয়ত শাশুড়ি ননদের গঞ্জনা শুনে আবার স্বামীর গালমন্দ শুনেই পার করে সারাটা জীবন। হয়তো বা শুধুই বিছানার সঙ্গী হয়ে কাটিয়ে দেয় অধিকাংশ নারী।
তাদের যদি বলা হয়, কেন তোমরা সহ্য করছো?! মানুষের মত বাঁচো! তারা কি শুনবে? শুনবে না। উল্টো বলবে, তুমি কি আমার সুখের সংসারে আগুন লাগাতে চাও?
এই যে প্রতিবাদ না করা। মুখ বুজে সহ্য করা-এ কি শুধুই সুখের সংসার বাঁচাতে? !! নাকি সমাজের অপবাদের বোঝা যাতে বইতে না হয় সেজন্যে?!
ধর্মতো মেয়েদের বেঁধে রাখে নি? দিয়েছে স্বাধীনতা! কিন্ত তা কি আমরা আক্ষরিক অর্থে পাচ্ছি? এই সমাজ কি আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে?!!
বাবার বাড়িতে মেয়ে হয়ে, স্বামীর সংসারে বউ হয়ে, আর সন্তানের মা হয়ে অনেকেই নিরানন্দ জীবনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের যাই হোক না কেন। নিজের মেধার বিকাশের সুযোগ সে আর পাচ্ছে না। ফলে স্বামী যদি বলে আমার টাকায় খাচ্ছো-পরছো, যেভাবে বলব সেভাবেই চলতে হবে, সেটা মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছু কি করবার আছে? আর বাবার বাড়ি সে-তো বিয়ের পর পরের বাড়ি হয়ে যায়।
মেয়েরা কখনও স্বামীর মন রক্ষার্থে সংসার বাঁচাতে বাবার কাছে সহযোগিতা চায় আবার কখনও স্বামীর কাছে মাথা নত করে বাবার মান বাঁচাতে। অপমানিত লাঞ্ছিত জীবনটাকে কেউ যদি মুখ বুজে সহ্য করে যেতে পারে তবে সে ভূষিত হয় মহান বা আত্মত্যাগী মহিলা রুপে। কিন্ত কেউ যদি নিজের আত্মমর্যাদাবোধকে মুল্য দিয়ে অপমানিত জীবন মেনে নিতে না চায় তবে কি তাকে সমাজ ছেড়ে দেবে? “মুখরা” “কুলটা” অপবাদের বোঝা না দিয়েই?
এখন একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। ধরে নেই, সমাজ সংসার ধর্ম বাদ দিয়ে জঙ্গলকে কেউ বেছে নিল সুখের নিবাস হিসেবে। যেখানে কোনো দায় নেই। তারপরও কি কোনো মানুষ হলফ করে বলতে পারবে, সে ১০০% সুখি? তা যদি নাই হয় তবে সুখটা কথায়????
বাবা মা ভাবে সন্তানকে কষ্ট করে মানুষ করলে বুড়ো বয়সে সুখ মিলবে। কিন্ত সেই সন্তান যখন বড় হয়ে মা-বাবাকে ফেলে নিজের সুখের সংসার গড়তে ব্যস্ত হয়ে ওঠে তখন?
আমার অনেক স্বপ্নে দেখা সুখের সংসার মাত্র তিন মাসের মাথায় ভেঙে গেল সে কি কেবল আমার দোষে? ছোট ছিলাম তাই বুঝতে পারি নি, অথচ সব দায়ভার আমাকেই নিতে হয়েছিল। কারণ আমি মেয়ে হয়ে সুখের স্বপ্ন দেখেছিলাম।
এরপর থেকে ছেলেদের আমি সহ্য করতে পারতাম না। ওদের কষ্টের মাঝেই আমি সুখ পেতাম। কিন্ত সেটা কি সত্যিকার অর্থে সুখ ছিল?
দ্বিতীয়বার আমার আবার বিয়ে হলো। ভাবলাম হয়ত এবার আমি সুখের সংসার গড়তে পারব। প্রথমবারে ছোট ছিলাম, তাই না বুঝে সব অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেছি। এবার সংসার করব, কিন্ত অন্যায় সহ্য করবো না মুখ বুজে। কিন্তু সুখপাখি কি ধরা দিয়েছিল আমার কাছে? সবাই বললো, বাচ্চা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত বাচ্চা কি সংসার টিকাতে পেরেছিল!
উল্টো সেকেন্ডহ্যান্ড উপাধি নিয়ে সংসার ছাড়তে হলো। যদি সব মেনে নিতাম তাহলে কি সুখী হতাম? প্রথমবারে তো মেনে নিয়েছিলাম সবই। তাহলে কেন সংসার বাঁচাতে পারলাম না? এরপর যখন সংসার ছেড়ে দিলাম, তখনো কেন সুখ পেলাম না। বিয়ে ভাঙা এক অল্পবয়েসী মেয়ের দিকে কী চোখে তাকিয়েছে আমাদের এই সমাজ? এমনকি পরিবার আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব? এরা কি কেউ সহজভাবে নিতে পেরেছে ব্যাপারটা?
আর এখন এই যে আমি অজানা অচেনা এক দেশে বাস করছি। এখন কিভাবে দেখছে এখানকার বাঙালি সমাজ আমাকে? সংসার ছেড়েছি, দুই দুই বার বিয়ে ভেঙেছে, তার জন্যে যেন সবার শ্যেনদৃষ্টির সামনে আমি। যদি নিজেকে ভাসিয়ে দেই, তাহলে ওরা সবাই খুশি হয়ে বাহবা দেবে সামনে আর পেছনে অপবাদ দেবে কুলটা। কিন্ত যদি না দেই? তাহলেও কি ওরা ছেড়ে দেবে? আমার উপর পড়বে পুরুষের ইগো থেকে সৃষ্ট অসংখ্য সব অপবাদ।
এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সুখের পথে সামাজিক মূল্যবোধই কি অন্তরায়? নাকি গোটা পৃথিবীর পুরুষমানুষরাই এর জন্যে দায়ী? নাকি মানুষ জানেই না আসলে সুখ কি জিনিস।
আমি ধার্মিক, খুবই ধার্মিক। আমি প্রকৃতি ভালবাসি। ভালবাসি গাছপালা পশুপাখি। আমি বিশ্বাস করি আমি এক সফরে আছি। এই সফর শেষে যেতে হবে আরেক অনন্ত সফরে। হয়তো সেই জীবনে গিয়ে আমি আমার সুখের সন্ধান পাবো।
আর এই জীবনে! এই জীবনে আমি অনেক সুখী। কারণ আমি স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পিত করেছি। মানুষের কল্যাণের মাঝেই আমি আমার সুখকে খুঁজে নিয়েছি।
একটা জিনিস আমি বুঝেছি, সেটা হলো চাওয়ার মাঝে কিন্তু কোনো সুখ নেই। সুখ আছে দেয়ার মাঝে। তাই আমি শুধুই দিতেই চাই। মন-প্রাণ উজাড় করে শুধুই দিতে চাই। ভালবাসা দিতে চাই অসহায় বঞ্চিতের মাঝে, প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে চাই আমার সমস্ত সত্ত্বা। সৃষ্টির লালনে বিলাতে চাই আমার ছোট এই জীবন।
   
            

নিচের লেখাটি 

Rabindranath Tagore ব্লগ থেকে নেওয়া...




যাহারা রীতিমতো বাঁচিতে চাহে, মুমূর্ষুভাবে কালযাপন করিতে চাহে না, তাহারা দুঃখ দিয়াও সুখ কেনে। হ্যফ্‌ডিং বলেন ভালোবাসা ইহার একটি দৃষ্টান্তস্থল। ভালোবাসাকে সুখ বলিবে না দুঃখ বলিবে? গ্যেটে তাঁহার কোনো নাটকের নায়িকাকে বলাইয়াছেন যে, ভালোবাসায়

          কভু স্বর্গে তোলে, কভু হানে মৃত্যুবাণ।

অতএব সহজেই মনে হইতে পারে এ ল্যাঠায় আবশ্যক কী? কিন্তু এখনও গানটা শেষ হয় নাই। সুখ দুঃখ সমস্ত হিসাব করিয়া শেষ কথাটা এইরূপ বলা হইয়াছে--

        সেই শুধু সুখী, ভালোবাসে যার প্রাণ।

ইহার মর্ম কথাটা এই যে, ভালোবাসায় হৃদয় মন যে একটা গতি প্রাপ্ত হয় তাহাতেই এমন একটা গভীর এবং উদার পরিতৃপ্তি আছে যে, প্রবল বেগে সুখ-দুঃখের মধ্যে আন্দোলিত হইয়াও মোটের উপর সুখের ভাবই থাকিয়া যায়, এমন-কি, এই আন্দোলনে সুখ বল প্রাপ্ত হয়।

এই সুখের সহিত দুইটি মানসিক কারণ লিপ্ত আছে। প্রথমত, দুঃখ যে পর্যন্ত একটা বিশেষ সীমা না লঙ্ঘন করে সে পর্যন্ত সুখের পশ্চাতে থাকিয়া সুখকে প্রস্ফুটিত করিয়া তোলে। এই কারণে, যাহারা সুখের গাঢ়তাকে প্রার্থনীয় জ্ঞান করে তাহারা অবিমিশ্র সামান্য সুখের অপেক্ষা দুঃখমিশ্রিত গভীর সুখের জন্য অধিকতর সচেষ্ট। দ্বিতীয়ত, দুঃখেরই একটা বিশেষ আকর্ষণ আছে। কারণ, দুঃখের দ্বারা হৃদয়ের মধ্যে যে একটা প্রবল বেগ, সমস্ত প্রকৃতির একটা একাগ্র পরিচালনা উপস্থিত হয় তাহাতেই একটা বিশেষ পরিতৃপ্তি আছে। ক্ষমতার চালনামাত্রই নিতান্ত অপরিমিত না হইলে একটা আনন্দ দান করে। বিখ্যাত দার্শনিক ওগুস্ত্‌ কোঁৎ তাঁহার প্রণয়িনীর মৃত্যুর পরে এই বলিয়া শোক প্রকাশ করিয়াছিলেন, "আমি মরিবার পূর্বে মনুষ্যপ্রকৃতির সর্বোচ্চ মনোভাব যে অনুভব করিতে পরিয়াছি সে কেবল তোমরাই প্রসাদে। এই মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গে যত কিছু কঠিনতম যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছি সেইসঙ্গে এ কথা সর্বদাই মনে উদয় হইয়াছে যে, হৃদয়কে পরিপূর্ণ করাই সুখের একমাত্র উপায়, তা সে যদি দুঃখ দিয়া তীব্রতম যন্ত্রণা দিয়া হয় সেও স্বীকার।'-- আমরা যদি দুঃখ হইতে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পাইতে চাই তবে কিছুতেই ভালোবাসিতে পারি না। কিন্তু ভালোবাসাই যদি সর্বোচ্চ সুখ হয় তবে দুঃখের ভয়ে কে তাহাকে ত্যাগ করিবে! কর্মানুষ্ঠানের প্রবলতা ও জীবনের পরিপূর্ণতার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তর ব্যয়, মুহুর্মুহু ঘাত-প্রতিঘাত এবং অবিশ্রাম আন্দোলন আছেই। কিন্তু জীবনের সর্বোচ্চ সম্পদগুলি বিনামূল্যে কে প্রত্যাশা করে!

মনস্তত্ত্ববিৎ পণ্ডিতের কথা উপরে প্রকাশিত হইল এখন কবি চণ্ডীদাসের দুটি কথা উদ্ধৃত করিয়া শেষ করি। রাধিকা যখন অসহ্য বেদনায় বলিতেছেন--

          "বিধি যদি শুনিত, মরণ হইত,
          ঘুচিত সকল দুখ'


তখন--

          চণ্ডীদাস কয় "এমতি হইলে
          পিরীতির কিবা সুখ!'


দুঃখই যদি গেল তবে সুখ কিসের!

   

 
সুখ সুখ করি আমি সুখ কি আমার রবে চিরদিন

কালে কালে সুখ হবে কালেতে বিলীন

  সুখ অর্জনের প্রচেষ্টা সবাই করে। মানুষ জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুঃখ মুক্তির আন্দোলনে ব্যস্ত থাকে। দুঃখজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে মানুষ দুঃখের কারণ অনুসন্ধান করে এবং দুঃখ অপনোদনের প্রয়াস করে। মানুষ দুঃখ কিছুতেই চায় না, চায় সুখ, সুখের অনুভূতি। প্রতিদিন পাগলের মতো আমরা সুখের পশ্চাতে ধাবিত হই। সুখের নাগাল পাওয়ার পূর্বেই দেখি সুখ কালেতে বিলীন হয়েছে। সুখ ধরে রাখা যায় না। আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে যেমন পানি পড়ে যায় তেমনি হারিয়ে যায় সুখ। তবুও আমরা উন্মত্তভাবে সুখ সুখ করি। কত মোহান্ধ ও নির্বোধ আমরা!
ক্ষুধার্ত মানুষ সুখ চায় না। ক্ষুধার্ত মানুষ চায় খাদ্যবস্তু। খাদ্য গ্রহণ করার সময় মানুষ যে তৃপ্তি পায় তাকে সুখ বলা চলে। অর্থাৎ সুখ হলো কাম্য বস্তু ভোগের অনুভূতি। অর্থাৎ বাস্তবে মানুষ কামনা করে বস্তু। কারণ কোনরূপ বিচার বিবেচনা ব্যতীত যে কর্ম অধিকতর সুখ প্রদান করে তা-ই যদি মানুষ করতে থাকে তবে পরিণামে মানুষ দুঃখই প্রাপ্ত হবে। যেমন, ভোজনে যে সুখ আমরা পাই তা যদি বিচার বিবেচনা না করে বাড়াতে থাকি তবে অচিরেই তা অসুখ সৃষ্টি করবে। তাই সুখের ঊর্ধ্বে বিচার বিবেচনার স্থান।
সুখ বা দুঃখ আমরা অনুভব করি। ইন্দ্রিয় অনুভূতি তীব্র তাই ইন্দ্রিয় সুখও তীব্র। কবিতা পাঠের চেয়ে সুস্বাদু ভোজন তীব্র ইন্দ্রিয় সুখানুভূতি দেয়। আমরা সুখ সুখ করি কিন্তু সুখই যদি লক্ষ্য হয় তবে তুলনামূলকভাবে যে সুখ তীব্র তা-ই কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে মানুষ যদি ইন্দ্রিয় সুখকেই সর্বদা প্রাধান্য দেয় তবে তা অতি দুঃখের কারণ হবে। অন্যদিকে, ইন্দ্রিয়ের পরিতৃপ্তিতে যে সুখ হয় তার প্রবলতা ক্রমশঃ বিলুপ্ত হয়। যে জীবনে কোনদিন আপেল খায় নাই সে প্রথম আপেলটির জন্য যে মূল্য দিতে প্রস্তুত দ্বিতীয় আপেলের জন্য তার চেয়ে কম মূল্য দেবে। অর্থনীতিতে একে বলা হয় ক্রমহ্রাসমান উপযোগ বিধি। বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয় সুখে অভ্যস্থ হয়ে গেলে তা শিথিল হয়ে যায়।
দৈনন্দিন জীবনে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতেই হয় যখন একা কোন সুখ ভোগ করলে অনেকের দুঃখ হয়। সে ক্ষেত্রে কেবল নিজের সুখ ভোগ করলে পরিণামে দুঃখের অনুভূতি হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে এক ব্যক্তিকে কষ্ট দিলে অনেক লোকের সুখের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে সুখই যদি লক্ষ্য হয় তাহলে বিত্তবানের বিত্ত বলপূর্বক অধিগ্রহণ করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা ন্যায় বিবেচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটি করা অপরাধ। এসব ত্রুটির কারণে সুখ জীবনের লক্ষ্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। সুখ-দুঃখ, ভালো লাগা-খারাপ লাগা এসব আবেগাত্মক বিষয়কে ধর্ম অধর্মের মানদণ্ড করা যায় না।
ধর্মীয় বিবেচনায় সুখের অনুভূতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া যায় না। কারণ সুখের পরিমাণগত এবং গুণগত পার্থক্য আছে। কবিতা পাঠের সুখ আর ভোজনের সুখ এক নয়। জ্ঞানীর সুখ আর মূর্খের সুখ এক নয়। কখন কোন্‌ বস্তু কাকে কতটা সুখ দেবে তা পরিমাপ করা যায় না। চিন্তার বিকৃতিও মানুষের মধ্যে সুখ উৎপন্ন করতে পারে। অন্যকে কষ্ট দিয়ে, অন্যের উপর অত্যাচার করেও অনেকে সুখ পায়। হিংসা, ঈর্ষা, পরনিন্দাও মানুষকে সুখ দেয়। এ জাতীয় সুখ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অকল্যাণকর। কোন বস্তুর স্বাদ যেমন নির্ণয় করে না যে বস্তুটি স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভালো ঠিক তেমনি সুখের অনুভূতিও প্রমাণ করে না যে কাজটি বিচার-বিবেচনায় ভালো।
এ জগতে সুখী মানুষের সংখ্যা খুব কম। প্রত্যেকেরই কোন না কোন দুঃখ রয়েছে। কোন ব্যক্তি হয়তো খুব বিত্তবান, প্রচুর সুস্বাদু খাদ্য তার কাছে মজুদ আছে কিন্তু সে খেতে পারে না, ডায়াবেটিস কিংবা পরিপাক যন্ত্রের ত্রুটির কারণে। অন্যজন সম্পূর্ণ সুস্থ, পরিপাক যন্ত্রও উত্তম কার্য করে কিন্তু তার হয়তো মুখে দেয়ার মতো খাবার জোটে না। কারো অনেক সন্তান। সন্তানদের কি খাওয়াবে, কি পড়াবে, এ নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই। অন্যজনের অনেক বিত্ত কিন্তু নিঃসন্তান।
সুখ-দুঃখ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। দুঃখ ব্যতীত সুখ এবং সুখ ব্যতীত দুঃখকে গ্রহণ করা যায় না। দুঃখ চাওয়া যেমন মর্যাদার নয় তেমনি সুখ চাওয়াতে কোন মর্যাদা নেই। যাদের সম্যক বিচারবুদ্ধি আছে তারা সুখের পশ্চাতে যেমন ছুটবে না তেমনি ছুটবে না দুঃখের পশ্চাতেও। যে সত্যকে নিয়ে আছে সে তো কেবল সত্যকে নিয়েই থাকবে। সুখ কিংবা দুঃখ যে কোন পরিস্থিতিতে সে সাম্যে স্থিত, পরিতৃপ্ত শুধু এই কারণেই যে সে সত্যের সঙ্গে আছে। যে সত্যের সঙ্গে আছে, সত্যও যার সঙ্গে আছে তার চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোন কারণই নেই। তাই সুখ বা দুঃখ নয়, সত্যকে নিয়ে থাকাই হলো মানুষের জীবনে মূল কাজ।
যে মানুষ সত্য নিয়ে কাজ করে তার মধ্যে স্থূল সুখ প্রাপ্তির তাগিদ থাকে না, থাকে আনন্দ সমপ্রাপ্তির এষণা। সুখ ও আনন্দ এক নয়। কুকুর হাড় চিবোতে থাকে, তাতেই তার সুখ, কিন্তু মানুষ হাড় চিবোবার আগে ভাববে, চিবোনোটা উচিত কিনা; সে ভেবে দেখে ওটা তার ক্ষুধা নিবারণ করবে কি-না। মানুষ বিচার করে কাজ করবে, কারণ মানুষের লক্ষ্য আনন্দ প্রাপ্তি, সুখ প্রাপ্তি নয়। মানুষ যদি সুখের পেছনে দৌড়োতে থাকে তাহলে ধীরে ধীরে সে পশুর দশা প্রাপ্ত হবে। পশুর জীবন নিছক ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের জন্য আর মানুষের জীবন আধ্যাত্মিক আনন্দানুভূতির জন্য।
সুখ একটি অনুভূতি।  অনুভূতি চেতনার একটি অবস্থা মাত্র। চেতনার রূপান্তর মানুষের আয়ত্বে। ইন্দ্রিয় সুখের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যই শ্রেয়। বিলোপে ও সংযমে অনেক প্রভেদ। ইন্দ্রিয়ের বিলোপ ধর্ম নয়। ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রের সামঞ্জস্যই ধর্ম।
             

সুখ তুমি কি, বড় জানতে ইচ্ছে করে

 

 আপনি কি সুখি জানতে চান তাহলে ভিজিট করুনঃ-http://www.pursuit-of-happiness.org/happiness-quiz-happy2/

যারা নিজেকে সবসময় অসুখী মনে করেন তাদের অনেকেই মানসিক ডাক্তার ও মনস্তত্ত্ববিদের কাছে যান সাহায্যের জন্য৷ এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, কারা তাদের কাছে আসেন এবং তাদের সমস্যা কি?
ড্যুসেলডর্ফের মনস্তত্ত্ববিদ আন্ড্রেয়াস সোলইয়ানের কাছে এমন সব মানুষই আসেন যারা কোনো কিছু হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করছেন৷ ‘‘যেমন কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে,বিবাহ বিচ্ছেদ বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে৷’’

সুখের প্রাচুর্যও অসুখী করে তোলে!
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সুখের প্রাচুর্যও অনেককে অসুখী করে তোলে৷ অল্প সময়ের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ অনেক কিছু ঘটে গেলে মানসিক দিক দিয়ে অনেকে তাল সামলাতে পারে না৷ ভাল একটি কাজ পাওয়া, নতুন জীবনসঙ্গী পাওয়া, বিয়ে হওয়া, সুলভ মূল্যে একটি বাড়ি কেনার সুযোগ হওয়া – এসব স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘটে গেলে বিহ্বল হয়ে যেতে পারে মানুষ, জেগে উঠতে পারে একটা মনমরাভাব৷
স্টেফান লেরমারের মতে, বলা যায়, অন্যের সঙ্গে তুলনা করা সুখকে ধ্বংস করতে পারে
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মনস্তাত্ত্বিক সোলইয়ান চিত্তাকর্ষক দুটি দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করেন৷ দুই জনের দুই রকম ভাগ্যলিপি৷ একজন, বিনা দোষে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত পক্ষাঘাতে আক্রান্ত এক তরুণ৷ এই তরুণ হাসিমুখেই থেরাপিস্টের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন৷ পরে সুখ সম্পর্কে তাঁর অনুভূতির কথা জিজ্ঞেস করা হয়৷ প্রশ্ন করা হয় একদম অসুখী থেকে বেশ সুখী, অর্থাৎ ০ থেকে ৬ পর্যন্ত সুখের স্কেলে নিজেকে তিনি কোথায় দেখেন৷ তাঁর উত্তর ছিল ৪.১৷ অন্যদিকে দ্বিতীয়জন লটারিতে পাঁচ লাখ ইউরো পেয়েও তাঁর উত্তর ছিল ৪.২৷ এতে বোঝা যায় একেক জনের সুখ ও দুঃখের অনুভূতি একেক রকম৷

কারণের ওপর মানুষের হাত নেই
মনোরোগ চিকিৎসক রোলান্ড উরবান মনে করেন, দুঃখের অনুভূতির ব্যাপারে একটা মিল দেখা যায় সব ক্ষেত্রে৷ আর সেটা হলো এর কারণটার ওপর মানুষের হাত নেই৷
মানুষ এটিকে প্রভাবিত করতে পারে না৷ যেমন অসুস্থতা, আপনজনের মৃত্যু কিংবা অন্য কোনো ক্ষতি হওয়া৷ তবে মানুষের ভেতরের একটা নিরাময় ক্ষমতা দুঃখবোধকে কমিয়ে দিতে পারে৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই চিকিত্সক বলেন, ভুক্তভোগী যদি এমন কিছু খুঁজে পান যা তার জীবনে একটা পরিবর্তন আনতে পারে, তাহলে দুঃখবোধটাও অনেক কমে যায়৷ এই প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দেন তিনি৷ এক মহিলা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর শোকাভিভূত হয়ে পড়েন৷ কিন্তু যখন থেকে তিনি পাশের বাড়ির এক অসহায় মহিলাকে সাহায্য করতে শুরু করেন, তখন থেকে নিজের দুঃখবোধও অনেকটা কমে যায়৷ সামাজিক কাজকর্ম, অন্যের প্রতি ভালবাসা, দায়িত্ববোধ এসব মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়৷ নিজের ক্ষতিকে ঘিরে থাকে না আর৷
মানসিক অসুস্থতা নয়
এই মনস্তাত্ত্বিক সতর্ক করে বলেন, দুঃখবোধকে মানসিক বৈকল্য বা অসুস্থতার সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘অসুখী বোধ করা একটি গভীর যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি৷ এটা কোনো অসুস্থতা নয়৷ অনেককে বলতে শোনা যায় তারা অসুখী এবং ডিপ্রেশনে ভুগছেন৷ শোক অনুভব করা সুস্থ মানুষের নিতান্তই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া৷''
মিউনিখের সাইকোথেরাপিস্ট ও কোচ স্টেফান লেরমার মনে করেন শোক ও ‘অসুখ' মানুষের জীবনেরই অঙ্গ৷ আলো ও ছায়ার মতো৷ সুখ খুঁজতে হলে প্রয়োজন আত্মআবিষ্কার৷ ‘‘মানুষের নিজের চাহিদাটা জানতে হবে৷ জানতে হবে আমি কী চাই? আমার কাছে কী গুরুত্বপূর্ণ? ভোগ মানুষকে সুখী করতে পারে না৷ এটা বলা যায়, অন্যের সঙ্গে তুলনা করা সুখকে ধ্বংস করতে পারে৷ অন্যকে সুখী করতে পারলে নিজেও সুখ পাওয়া যায়৷''
মনস্তত্ত্ববিদ লেরমার বলেন, আগে অনেকে পরকালে সুখ পাওয়ার আশা করতেন৷ আজ এই মনোভাব পালটে গেছে৷
সুখ হলো বেতার তরঙ্গের মতো৷ এটা সবসময় থাকে৷ একে শুধু বের করে আনতে হয়৷ বলেন শ্টেফান লেরমার৷





  • প্রত্যেক মানুষ শান্তি খুঁজে, কিন্তু কোথায় সুখ-শান্তির পথ?!

     

সকলেই একই লক্ষ্য উদ্দেশ্যে ঐক্যমত


বিনিময়ে সৌভাগ্য
“কখনো তুমি এমন কিছু করবে যা তোমার কোন সৌভাগ্য বয়ে আনবেনা, তবে কোনকিছু করা ছাড়া সৌভাগ্য আসেনা। “
পৃথিবীর বুকে প্রত্যেক মানুষই সুখ-শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের মতবাদ, জাতি, বর্ণ, উৎপত্তি, লক্ষ্য- উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন সবাই একটি উদ্দেশ্যে একমত, তা হলো সুখ ও প্রশান্তি তালাশ করা।
যদি কোন লোককে জিজ্ঞেস করঃ তুমি এ কাজটি কেন কর? উহা কি কারণে করবে? সে বলবেঃ সুখ-শান্তির জন্য!! চাই তা শব্দগতভাবে বলুক বা অর্থগতভাবে বলুক। শান্তির প্রকৃত বা রূপক যেকোন অর্থেই হোক।

সুখ-শান্তি কি?

তাহলে সুখ-শান্তি কি? কিভাবে ইহা পাওয়া যায়?

সৌভাগ্য হল আমাদের সব চেয়ে নিকটে
“অনেক সময় আমরা সৌভাগ্য খুঁজি অথচ সৌভাগ্য আমাদের কাছেই থাকে, যেমন আমরা চোখের উপর চশমা রেখে অনেক সময় চশমা খুঁজি।”
সুখ হলো আনন্দ, প্রশান্তি, ঔদার্য ও প্রফুল্লতার ধারাবাহিক অনুভূতি। এ সুখানুভূতি তিনটি জিনিসের স্থায়ী অনুভূতির ফলে আসে, তা হলোঃ আত্মার উৎকৃষ্টতা, জীবনের উৎকৃষ্টতা ও শেষ পরিণতির উৎকৃষ্টতা।
মানুষ নিজেকে এ তিনটি বিষয়ের ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন করে। সে যত বড় হয় তার প্রশ্নগুলো ততই বাড়তে থাকে। তার মনের মধ্যে ঘুর্ণায়মান এসব প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত সে সুখ-শান্তি লাভ করতে পারেনা। সেগুলো হলোঃ
-কে এ মহাবিশ্বের মালিক? কে ইহা পরিচালনা করেন?
-কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন? কে আমার চারপাশের এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন?
-আমি কে? কোথা থেকে এসেছি? কেন আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আমি কোথায় যাব?

পথ বিভিন্ন তবে আল্লাহ এক
“কোথায় যাচ্ছ যদি না জান, তবে সব পথই তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবে।”
যখনই মানুষের নিজের ও জীবনের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় তখনই এ সব প্রশ্নগুলো তার চিন্তা ভাবনার মাঝে বার বার ঘুরতে থাকে। যতক্ষণ না এ সব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পাওয়া না যায় ততক্ষণ সে প্রশান্তি লাভ করতে পারেনা।



  


Wednesday, July 22, 2015

এই আমাদের পৃথিবী

 

পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের   আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব বা "নীলগ্রহ "। লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম ''টেরা terra ।
পৃথিবী হল মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল হল। পৃথিবীই একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত।৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে   প্রাণের আর্বিভাব ঘটে। পৃথিবীর জৈবমন্ডলের  এই গ্রহের বায়ূমন্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজনস্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চোম্বুক্ষেত্র সঙ্গে একযোগে এই ওজন স্তরই ক্ষতিকর সৌরবিকিরণ গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে।পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক  ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে।
পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে টেকটনিক প্লেট বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত। অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। স্থলভাগেও রয়েছে অজস্র হ্রদ ও জলের অন্যান্য উৎস। এগুলি নিয়েই গঠিত হয়েছে বিশ্বের জলভাগ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তরল জল এই গ্রহের ভূত্বকের কোথাও সমভার অবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা কঠিন বরফ আন্টর্কটিক বরফের চাদর  বা সামুন্দ্রিক বরফে (আর্কটিক বরফের টুপি) আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই অংশ গঠিত হয়েছে একটি আপেক্ষিকভাবে শক্ত ম্যান্টেলের  মোটা স্তর, একটি তরল বহিঃকেন্দ্র (যা একটি চৌম্বকক্ষেত্র গঠন করে) এবং একটি শক্ত লৌহ অন্তঃকেন্দ্র  নিয়ে গঠিত।
মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাদের  সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে সৌরদিনে মোটামুটি ৩৬৫.২৬  বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।[পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ২৩.৪ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে। পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ  হল চাঁদ। ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের  সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।
গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক, পর্যটন, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা। এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা,সমতল বিশ্ব কল্পনা এবংপৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা। এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয়। এই ধারণাটি বর্তমানে প্রাধান্য অর্জন করেছে।


কিভাবে পৃথিবী তৈরি হল: আমরা সবাই নক্ষত্রকণা দিয়ে তৈরি
আমরা প্রাণের গল্পটা একেবারে প্রথম থেকেই শুরু করছি, যখন পৃথিবী এবং সৌরজগতের সবটুকু তৈরি হল। সৌরজগৎ একটি ঘুরতে থাকা নক্ষত্রকণার মেঘ থেকে তৈরি হয়েছে। তারপর কাছাকাছি একটি তারা বা নক্ষত্র বিস্ফোরিত হল এবং নক্ষত্রকণার মেঘ কে আন্দোলিত করলো এবং তারা ঘ‍্যূর্ণনের গতিকে বাড়িয়ে দিল। ফলে, মেঘটির প্রায় সবটুকু ভর একেবারে ঘূর্ণনের কেন্দ্রে গিয়ে জমা হল এবং সেটাই সূর্যের তৈরি করলো। আবার কিছু ছোট ছোট ভর সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল, তারা সব গ্রহগুলি তৈরি করলো। আমাদের পৃথিবীও এভাবে তৈরি হল। কিভাবে পৃথিবী তৈরি হল সেটা নিয়ে একটি দারুণ ভিডিও নিচে দেয়া হল। দেখে নাও ঝটপট। ইংরেজী বুঝতে কষ্ট হলে কাউকে জিজ্ঞেস করে নাও যেটা বুঝছোনা সেটার মানে।

প্রথমে, পৃথিবী ছিল গলিত (অনেক গরম ছিল বলে সবকিছুই তাপে তরল হয়ে গেছে। তুমি যদি লোহাকে অনেক তাপ দাও তবে লোহাও গলে তরল হয়ে যাবে) এবং সেখানে কোন জলবায়ু বা সমুদ্র ছিলনা। ধীরে ধীরে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে এবং এর বাইরের দিকে শক্ত আবরণ তৈরি হয়। আর জলবায়ুও তৈরি হল ধীরে ধীরে। প্রথম জলবায়ুতে ছিল এমোনিয়া, মিথেন, পানির বাষ্প এবং কার্বন ডাই অক্সাইড। কিন্তু অক্সিজেন ছিল খুবই কম। যখন জলবায়ু ঘণ হতে থাকলো তখন মেঘ তৈরি হল এবং বৃষ্টি পড়লো ভূপৃষ্ঠে। বৃষ্টির পানি (এবং হয়তো উল্কাপাত মিলে) তৈরি করলো সমুদ্র। এই আদিম পৃথিবীর আবহাওয়া এবং সমুদ্র এখনকার বেঁচে থাকা জীবজন্তুর জন্য সম্ভবত বিষাক্ত ছিল, কিন্তু এটা প্রথম জীবের বা প্রাণের উদ্ভবের অনুকূল ছিল






Tuesday, July 21, 2015

     

রহস্যময় বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল

               

 

যেদিন থেকে সুনেছিলাম বারমুডা ট্রাইএংগেল এর কথা সেদিন থেকেই বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল এর প্রতি আমার অন্য রকম একটা আকর্ষণ ছিল। বিষয়টা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করি। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন রকম তথ্য সংগ্রহ করি। আজ সবার মাঝে শেয়ার করলাম। যারা এই বিষয়ে জানেন আমাকে কমেন্ট করে আরও কিছু জানার সুযোগ করে দিবেন। আপনাদের কাছ থেকে আরও কিছু অজানা তথ্য হয়তও জানতে পারব।বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে শয়তানের ত্রিভুজ বলা হয়। এটিকে পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় স্থান বলে মানা হয়। কারণ এপর্যন্ত এখানে যত রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটেছিল,অন্য কোথাও এতবেশি দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা এ অঞ্চলটির নামকরণ করে শয়তান বা পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।জাদুকর পিসি সরকারের জাদুর কারিশমায় অনেক কিছু ভ্যানিশ হওয়ার গল্প আমাদের জানা। কিন্তু এই ম্যাজিকে ভ্যানিশহয়ে যাওয়া জিনিস হুবুহু রয়েই যায়। মাঝে কেবল আমাদের বুদ্ধি আর ইন্দে য়গুলোকে বোকা বানানো হয়। কিন্তু কুখ্যাত শয়তানেরদ্বীপ কিংবা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে কেন্দ্র করে প্রচলিত গল্প কিংবা ঘটনাগুলোর রহস্য আজো উন্মোচিত হয়নি।বারমুডা ট্রাইয়েঙ্গেল রহস্য ( ভিডীও )এলেন অস্টিন ‘ জাহাজটির কথাই ধরা যাক। এ জাহাজের মাঝি-মাল্লারা যেভাবে হারিয়ে গিয়েছিলেন তার হদিসআজো কেউ করতে পারেনি। ফিরে পাওয়া যায়নি তাদের। মধ্য আটলান্টিকে পাড়ি দেওয়ার সময় এলেন অস্টিন জাহাজেরনাবিকরা একটু দূরে একটি খালি জাহাজ ভাসতে দেখে ভীষণ অবাক হন। ঠিক করলেন নিজের জাহাজের মাঝি-মাল্লাদেরপাঠিয়ে একটু দেখে আসা যাক। পাঠালেনও সেই মতো। মাঝিরা জাহাজের কাছাকাছি পেঁৗছতেই ঘনকুয়াশা চারদিকঢেকে গেল। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কি হলো কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে গেল। খালি জাহাজটি দেখা গেল।কিন্তু মাঝি-মাল্লারা গেল কোথায় তারা তো ফিরছে না! ঘটনার রহস্য সমাধান করতে আরও একটি দলকে পাঠানো হলো। ওইদলটিও জাহাজে পোছামাত্র শুরু হলো প্রচণ্ড ঝড়। এবারও কিছুই দেখা গেল না। ঝড় থামার পর দেখা গেল সব ভ্যানিশ। মাঝি-মাল্লাদের আর দেখা গেল না। এমনকি জাহাজটিও কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেছে! চারদিকে তোলপাড় পড়ে গেল। চলল অনেকখোঁজাখুঁজি। কিন্তু কোথাও এর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না।বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা শয়তানের ত্রিভুজের রহস্য এমনই। এখানে কোনো বিমান কিংবা জাহাজ হারিয়ে গেলে তারধ্বংসাবশেষ কোনো চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখানে কোনো মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায় না। কোনো কিছুরই নিদর্শনখুঁজে পাওয়া যায় না। এই ত্রিভুজ অঞ্চলে এমন অদ্ভুতভাবে হারিয়ে গেছে মানুষ জাহাজ কিংবা উড়োজাহাজ। এরকম অসংখ্যঅন্তর্ধানের গল্প বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে পৃথিবীর সেরা রহস্যাবৃত অঞ্চলে পরিণত করেছে। অনেকে মনে করেন এসব অন্তর্ধানেরকারণ নিছক দুর্ঘটনা যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী অতি-প্রাকৃতিক কোনো শক্তি বা ভিনগ্রহের প্রাণীর উপস্থিতি। জায়গাটির রহস্যময়তা নিয়ে বিস্তরলেখালেখি হয়েছে বানানো হয়েছে অসংখ্য ডকুমেন্টারি। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথা শোনা যায়। আবার যেসব দুর্ঘটনার ওপরভিত্তি করে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে চিহ্নিত করা হয়েছে তার বেশ কিছু ভুল আবার অনেক কিছুই লেখক দ্বারা অতিরঞ্জিতবলে মনে করা হয়।বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আসলে কি ?ক্যারিবীয় সাগরের এক কল্পিত ত্রিভুজ এলাকা হলো শয়তানের ত্রিভুজ। আটলান্টিক মহাসাগরের তিন প্রান্ত দিয়ে সীমাবদ্ধত্রিভুজাকৃতির একটি বিশেষ এলাকা যেখানে বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয়। এর মূল নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। তবে এর কুখ্যাতির জন্য একে শয়তানের ত্রিভুজ বলা হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যে তিনটি প্রান্তদ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা আরেক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এ অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। অবশ্য এই বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।বেশিরভাগ লেখক-গবেষকই এই নির্দিষ্ট অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছেন সীমানা বরাবর মিয়ামি সানজুয়ান পুয়ের্তো রিকো মধ্যআটলান্টিক আর বারমুডা নিয়ে তৈরি একটি ত্রিভুজ বা বলা ভালো একটি ট্রাপিজিয়াম আকৃতির চতুর্ভুজ। তবে বেশিরভাগহারিয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো ঘটেছে দক্ষিণ সীমানায় বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে এবং ফ্লোরিডা উপকূলের আশপাশে। কতজাহাজ ও বিমান হারিয়ে গেছে এ এলাকায় যেগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়নি আজও।বিভিন্ন লেখকের বর্ণনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের বিস্তৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। এই ত্রিভুজের ওপর দিয়ে মেক্সিকো উপসাগরথেকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোত বয়ে গেছে। এখানকার আবহাওয়া এমন যে হঠাৎ ঝড় ওঠে আবার থেমে যায় গ্রীষ্মে ঘূর্ণিঝড় আঘাতহানে। এ অঞ্চল বিশ্বের ভারী বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলকারী পথগুলোর অন্যতম। জাহাজগুলো আমেরিকা ইউরোপ ওক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত করে। এছাড়া এটি হলো প্রমোদতরীর বিচরণক্ষেত্র। এ অঞ্চলের আকাশপথে বিভিন্নরুটে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত বিমান চলাচল করে। ত্রিভুজের বিস্তৃতির বর্ণনায় বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত দিয়েছেন। কেউমনে করেন এর আকার ট্রাপিজয়েডের মতো যা ছড়িয়ে আছে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা বাহামা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জএবং ইশোর (অুড়ৎবং) পূর্ব দিকের আটলান্টিক অঞ্চলজুড়ে। আবার কেউ কেউ এগুলোর সঙ্গে মেক্সিকো উপসাগরকেও যুক্ত করেন।তবে লিখিত বর্ণনায় যে সাধারণ অঞ্চলের ছবি ফুটে ওঠে তাতে রয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল সান জুয়ান (ঝধহ ঔঁধহ)পুয়ের্তো রিকো মধ্য আটলান্টিকে বারমুডার দ্বীপপুঞ্জ এবং বাহামা ও ফ্লোরিডা স্টেইটসের দক্ষিণ সীমানা। আর এখানেইঘটেছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা। এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো কোনো জাহাজ এ ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণেরমধ্যেই বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময়তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়।সেই কলম্বাসের সময় থেকে শুরু করে এখনো এখানে ঘটছে একই ব্যাপার। এখানে এখনো হারিয়ে যায় জাহাজ সাবমেরিনকিংবা বিমান। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় সবকিছু। এর নামই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অভ্যন্তরে আছে শ ‘ তিনেককোরাল দ্বীপ। এর বেশির ভাগই জনবসতিহীন। আর এর মধ্যে একটি দ্বীপ হচ্ছে ’ বারমুডা ‘ । দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ১৫৬৫ সালে। একদুঃসাহসী নাবিক জুয়ান ডি বারমুডেজ দ্বীপের আবিষ্কারক। তার নামানুসারেই এই দ্বীপের নামকরণ করা হয়। এ এলাকার ধারঘেঁষে গেলেও দেখা যায় অদ্ভুত কিছু কাণ্ড-কারখানা। মাঝে মাঝে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বাতিল করে দেয় রেডিও বিকলকরে দেয় কম্পাস ইত্যাদির বারোটা বাজিয়ে দেয়। ক্ষুদ্র আলোক শিখা ধূমকেতুর পুচ্ছ সবুজ রঙের কুয়াশা বিদঘুটে জলস্তম্ভ প্রচণ্ডঘূর্ণিপাক পথ ভুলে যাওয়া হিংস ভাবে জাহাজ গিলতে আসা পাহাড় সমান ঢেউসহ ভয়ঙ্কর সব কাণ্ড-কারখানা। আবার এক মাসআগে যে জাহাজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সে জাহাজকেও ভুতুড়েভাবে ভাসতে দেখা যায় এখানে।বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা শয়তানের দ্বীপকে ঘিরে রহস্যময় ঘটনার কোনো অন্ত নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দুর্ঘটনা হলো ৫টি টর্পেডো বম্বারের দুর্ঘটনা। ১৯৪৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওই ত্রিভুজ স্থানে যানগুলো রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘটনাটিকে বলা হয় মেরি সিলেক্ট অব দি স্কাই। মেরি সিলেক্ট জাহাজটির অন্তর্ধান কাহিনীও অদ্ভুত। সেটি অবশ্য সীমানার মধ্যে ঘটেনি তবু এটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আকাশে বিমান মহড়া চলছে।এরকম প্রতিদিনই হয়। প্রতিটি বিমানেই পাইলটকে নিয়ে তিনজন ক্রু থাকে। সেদিন ছিল একজন কম। তারিখ ৫ ডিসেম্বর।ফলে আবহাওয়া পরিষ্কার। কন্ট্রোল টাওয়ার বিশেষ জরুরি। ভীত একটি কণ্ঠস্বর। মনে হচ্ছে আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছি।আমরা মাটি দেখতে পাচ্ছি না। টাওয়ার জিজ্ঞাসা করল তোমাদের পজিশন জানাও। তাও আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না।মনে হচ্ছে আমরা হারিয়ে গেছি। বিকাল গড়িয়ে গেল। তখনো তারা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই। ১৩ জন ক্রু নিয়ে একটি বিরাট মার্টিন মেরিনার ফ্লাইং বোট পাঠানো হলো তাদের উদ্ধার করে আনার জন্য। এ ফ্লাইং বোটটি অশান্ত সমুদ্রেও নামতে পারে এবং এমনভাবে তৈরি যে পানিতে ডুবে না। ফ্লাইট নাইনটির উদ্দেশ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বার্তা প্রেরণ করল-যেখানে আছ সেখানেই থাক। সাহায্য পাঠানো হলো। কিন্তু আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। মেরিনার আকাশে উঠে কোনো বিমান দেখতে পেল না। এটুকু খবর পাওয়ার পরই ব্যস। মেরিনারের সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা গেল না।দমকা হাওয়া। কোথায় যে গেল কী যে হলো কিছুই বোঝা গেল না। ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে তল্লাশি চালিয়ে হইহই ফেলে দিয়েও বিমানের একটি টুকরারও কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না। নেভার বোর্ড অব ইনকুয়ারির বৈঠক বসল। তদন্ত হলো। তদন্তের জন্য যারা বিমান নিয়ে গেল তারা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যে পথভ্রষ্ট হলো না। তার মানে সব বিমান বা জাহাজের ক্ষেত্রেই যে এমনটি ঘটেছে তা নয়।১৯৪৯ সালের ১৭ জানুয়ারী স্টার এরিয়েল নামের একটি বিমান লন্ডন থেকে জ্যামাইকা যাচ্ছিল। সকাল ৭টা ৪৫মিনিটে এটি বারমুডার আকাশে উড়ল। তখন আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক ও সুন্দর। আর সমুদ্র ছিল শান্ত। ওড়ার ৫৫ মিনিট পরবিমানটি অদৃশ্য হয়ে গেল। এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধান হলো। কিন্তু সমুদ্রের কোথাও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল না।বিমানটি অদৃশ্য হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি রাতে। ১৮ তারিখ রাতে এক অনুসন্ধানী দল জানাল সেখানকার সমুদ্রের বিশেষ বিশেষএকটি জায়গা থেকে অদ্ভূত একটি আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনার এক বছর আগে সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্যহয়ে গিয়েছিল একটি ডিসি-৩ বিমান। সেটি যাচ্ছিল সানজুয়ান থেকে সিয়ামি। ক্যাপ্টেনের নাম রবার্ট লিংকুইসড। ভোর৪টা ১৩ মিনিটে বিমানটি থেকে শেষ বেতার বার্তা ভেসে এলো আমরা অবতরণ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি।দক্ষিণে আর মাত্র পঞ্চাশ মাইল দূরে সিয়ামি বিমানবন্দর। আমরা সিয়ামি শহরের আলোকমালা দেখতে পাচ্ছি। সব ঠিক আছে।কোনো গোলমাল নেই। অবতরণের নির্দেশের অপেক্ষায় রইলাম। এই শেষ বার্তা পাঠিয়ে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর এর আর কোনো হদিস মেলেনি। ১৯৪১ সালে ওই রহস্যময় জায়গাতে অদৃশ্য হয়ে গেল তিনিটি ট্যাঙ্কার একটি চার ইঞ্জিনেরউড়োজাহাজ আর একটি ট্রলার। আরেকটি বিমান যাচ্ছিল নাসাউ থেকে বাহামার গ্রান্ডটার্ক দ্বীপের দিকে। ওই দ্বীপের কাছাকাছি এসে পাইলট বেতার সংকেতে জানালেন , ‘ আমি কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। দুটি অজানা দ্বীপের চারপাশে চক্কর মারছি। অথচ নিচে কিছুই দেখেতে পাচ্ছি না। এই ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় আছে কি যারা এই দুর্ঘটনার সাক্ষী তারা দেখতে পেল ওই হালকা বিমানটি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দ্বীপের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মেঘমুক্ত আকাশে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। এইগোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের একটি রহস্যময় অঞ্চল হলো জলীয়কেন্দ্রের একটি বিন্দু। ফ্লোরিয়া থেকে বাহামার মধ্যে একটঅঞ্চলকে বলা হয় রেডিও ডেড স্পট। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সেখানে কোনো বেতারতরঙ্গ প্রবেশ করতে পারে না এবং বেরহতেও পারে না। এমন একটি বিন্দু আছে যেখানে কম্পাস অচল হয়ে যায়।১৯১৮ সালে সেখানে ইউএস নেভির কয়েকটি জাহাজ নিখোঁজ হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে সাইক্লোপস জাহাজের অদৃশ্য হওয়া। তাতে ছিল ৩০৯ জন যাত্রী। ১৯ হাজার টন ভারী জাহাজটি বারবাডোস থেকে বাল্টিমোরের দিকে যাত্রা করেছিল। এ জাহাজটি সেখানে অদৃশ্য হয়ে যায়।বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা হলো ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে অন্তর্ধান হওয়া ফ্লাইট নাইনটিন। আরএটি নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয় , ‘ বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলনেতাকে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে _ আমরা কোথায় আছি জানি না সবুজ রঙের পানি কোথাও সাদা কিছু নেই। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে। এ নিয়ে যারা লিখেছেন তাদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তার জাহাজের নাবিকরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক- নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ অক্টোবর ১৪৯২ সালে তার লগবুকে এসব কথা লিখে রাখেন। তবে বর্তমান বিশেষজ্ঞরা লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন নাবিকরা যে আলো দেখেছেন তা হলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন। আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে।অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রথম খবরের কাগজে রিপোর্ট বেরোয় ১৯৫০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ইভিডবি্লউ জোন্স লিখিত এই খবরপ্রকাশের দু ‘ বছর পর ‘ ফেইট ‘ ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড ‘ সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর ‘ শিরোনামে একটি ছোট্টপ্রবন্ধ লেখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন (ইউএস নেভীর পাঁচটি টিবিএম অ্যাডভেঞ্চার বিমানের একটি দল যা প্রশিক্ষণমিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়)-এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভুজাকার অঞ্চলেরকথা সবার সামনে তুলে ধরেন। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনেও লেখা বেরোয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস ‘ প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ‘ নামে আরেকটি লেখা লেখেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লেখেন ’ ইনভিজিবল হরাইজন ‘ মানে ‘ অদৃশ্য দিগন্ত ‘ নামের বই। জন ওয়ালেস স্পেন্সার লেখেন ‘ লিম্বো অব দ্য লস্ট ‘, মানে ‘ বিস্মৃত অন্তর্ধান ‘, চার্লস বার্লিটজ লেখেন ‘ দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ‘, রিচার্ড উইনার লেখেন ‘ দ্য ডেভিল ‘ স ট্রায়াঙ্গল ‘ বা ‘ শয়তানের ত্রিভুজ ‘ নামের বই। এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন।এরা সবাই ঘুরেফিরে একটি বর্ণিত অতিপ্রাকৃত ঘটনাই বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। লেখকদের এসব রচনাকে অতিরঞ্জনবলা হলেও বারমুডার প্রকৃত রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। আর এই বারমুডার আরেকটি রহস্যের সমাধানও দিতে পারেনি কেউ। আর তা হচ্ছে একটি অদ্ভুত জৈবের রহস্যময় উপস্থিতি। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে যাতায়াত করেছেন টেডি টাকার নামের এক ডুবুরি। কয়েক বছর আগের কথা। একদিন সকালবেলা বারমুডার বেলাভূমিতে টেডি একটি অদ্ভুত বস্তু দেখতে পেলেন। সেটি ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ পাউণ্ড ওজনের উজ্জ্বল সাদা একটি পিণ্ড। স্থানীয় লোকেরা ওই রহস্যময় বস্তুটির নাম দিল বারমুডা ব্লপ।সেটি পরীক্ষা করে টেডি বলেন , ‘ জিনিসটি যে জৈব পদার্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এরকম কোনো প্রাণী কখনও দেখা যায়নি। এই পিণ্ডের একটি টুকরা কেটে নিয়ে গবেষণা করা হলো মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়া গেল ওই পিণ্ডটি কোনো প্রাণীদেহেরই অংশ। বিজ্ঞানীদের ধারণা এটি খুব অদ্ভুত কোনো কোলাজেন টিউমার। আর সেটি অবশ্যই কোনো বড়সড় জলচর প্রাণীর। যেমন তিমি। কিন্তু আরেক দল গবেষক বলেছেন ওটি একটি প্রকাণ্ড অক্টোপাস। রহস্যময় ব্যাপার হলো _ পিণ্ডটি বেলাভূমিতে পড়ে থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত ভেঙে টুকরা টকুরা হয়ে যায়। অথচ তাতে এতটুকু পচন ধরেনি। বারমুডার এই নতুন রহস্যের মীমাংসা হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় সব অন্তর্ধানের কারণ নিয়ে অনেকগুলো তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়েছে। কেউ বলেছেন ওখানকার সমুদ্রে বা আকাশে আস্ত একটা ফাটল আছে। প্রকৃতির সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে বিমান বা জাহাজ হারিয়ে যায় চিরকালের মতো। কেউ বলেন অজানা এক সভ্যতার কথা যেখানে আগুনের গোলা লাফিয়ে ওঠে। বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় সব জাহাজ ও উড়োজাহাজ। কারো মতে ওই অঞ্চলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের জন্য বিশাল জলস্তম্ভ জাহাজ উড়োজাহাজ সবকিছুকে নিজের গহবরে টেনে নেয়। কেউ বলেছেন অন্য গ্রহের প্রাণী বা এই জাতীয় কিছু যা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য। কেউ আবার ব্যাখ্যা করেছেন ফোর্থ ডাইমেনশন বা চতুর্থ মাত্রার। তাদের মতে সময়ের একটা অনন্ত ফাটল ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকে। ওইসব জাহাজ ও বিমান সময়ের সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে হারিয়ে যায় বর্তমান কালের কাছ থেকে। তারা চলে যায় সুদূর অতীতের কোনো সময়ে। নয়তো ভবিষ্যতের গর্ভে।কেউ আবার চুম্বকীয় তত্ত্বের মাধ্যমে রহস্যটি মীমাংসা করতে চেয়েছেন। তাদের মতে ওই অঞ্চলে আকাশ ও সমুদ্রের মধ্যে একতড়িতাহত ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। সেখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র। কারো মতে ওই রহস্যময়অংশে পর্যায়ক্রমে অজানা এই রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি হয়। সেই যৌগ যাবতীয় ইচ্ছাশক্তি ও ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিকে অবশকরে দেয়। সমুদ্রের মধ্যে বিভিন্ন বিপাকক্রিয়ার ফলে এক অজানা জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে। এর ফলে সেখানে রহস্যময়ঘটনাগুলো ঘটেছে।বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা শয়তানের দ্বীপ নিয়ে যতসব রহস্য সব রহস্যেরই একে একে ইতি টেনেছেন বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও লেখক।অনেকেই একে অতিরঞ্জিত গালগল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আবার অনেকে একটি সেরা বাণিজ্যিক রহস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। প্রশ্ন আসতে পারে রহস্যের আবার বাণিজ্য কিসের আপাতদৃষ্টিতে রহস্যে কোনো বাণিজ্যিক দিক না থাকলেও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। যেহেতু বছরের পর বছর ধরে এ স্থানের রহস্যময়তা কেবল বেড়েই চলেছে তাই এ সম্পর্কে সব ধরনের গুজবই ডালপালা মেলেছে। আর বিশ্বজুড়ে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পেঁৗছে যায় মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর এখানেই তৈরি হয় এর বাণিজ্যিক ভিত্তি। কি সংবাদপত্র কি টিভি চ্যানেল অথবা বই-পুস্তক সবখানেই এর জয়জয়কার। আর এ কারণেই এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেয়ে গল্প বলায় আগ্রহী ছিলেন সবাই। এরপরও অনেকে এ বিষয়ে গবেষণার পর কিছু কারণ দেখিয়েছেন। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব না হলেও এ কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে রহস্যের জট ভাঙায় কিছুটা হলেও সহজ হবে। কুসচ এর ব্যাখ্যা : লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং ‘ দ্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিস্ট্রি : সলভড ‘ এর লেখক। তার গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ-এর বর্ণনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেন। কুসচ-এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হলো _ বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে যত সংখ্যক জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয় তার সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় খুব বেশি নয়।এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় নিয়মিত আঘাত হানে যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকরা এ ধরনের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গেছেন। অনেক ঘটনার বর্ণনায়ই লেখকরা কল্পনার রং ছড়িয়েছেন। আবার কোনো নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে প্রচার করা হয়েছে। আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকরা বলেছেন। যেমন _ ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয় ; কিন্তু তখনকার খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।সুতরাং কুসচ ‘ র গবেষণার উপসংহারে বলা যায় _ লেখকরা অজ্ঞতার কারণে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরি করেছেন। মিথেন হাইড্রেটস এখানে দেখানো হয়েছে বিশ্বের যেসব স্থানে গ্যাস হাইড্রেটযুক্ত পলি পাওয়া গেছে অথবা আছে বলে অনুমান করা হয়। কন্টিনেন্টাল সেলভে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে। কম্পাসের ভুল দিক-নির্দেশনা কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনীর সঙ্গে জড়িত। এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে এর দিক-নির্দেশনায় বিচ্যুতি আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রে শুধু উইসকনসিন থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিকভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। ওই ত্রিভুজ এলাকাজুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যুতি সাধারণের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটি খুবই স্বাভাবিকঘটনা।হ্যারিকেনহ্যারিকেন হলো শক্তিশালী ঝড়। ঐতিহাসিকভাবেই জানা যায় আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হ্যারিকেনের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। রেকর্ড অনুসারে ১৫০২ সালে স্প্যানিশ নৌবহর ‘ ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলা ‘ এমনি একটি বিধ্বংসী হ্যারিকেন ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।গলফ স্ট্রিমগলফ স্ট্রিম হলো মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। একে বলা যায় মহাসমুদ্রের মাঝে এক নদী। নদীর স্রোতের মতো গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তুকে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারে। যেমনি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ‘ উইচক্রাফট ‘ নামের একটি প্রমোদতরীতে।মিয়ামি তীর থেকে এক মাইল দূরে এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে কোস্টগার্ডকে জানানোর পরই গলফ স্ট্রিমকবলিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় জাহাজটি। দৈত্যাকার ঢেউ হঠাৎ করেই সমুদ্রে দৈত্যাকার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে এমনকি শান্ত সমুদ্রেও এমন ঘটতে পারে। তবে একথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে এমন ঢেউ নিয়মিত সৃষ্টি হয়।মানবঘটিত দুর্ঘটনা : অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। যেমন- কোস্টগার্ড ১৯৭২ সালে ভিএ ফগ-এর নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে বেনজিন-এর পরিত্যক্ত অংশ অপসারণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছে। তবে রহস্যের কারণ হলো _ অনেক নিখোঁজের ঘটনারইউপসংহারে পেঁৗছানো যায়নি কেননা এর কোনো ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইচ্ছাকৃত ধ্বংসসাধন যুদ্ধের সময় অনেক জাহাজ শত্রুপক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ডুবে গেছে বলেও মনে করা হয়। যেমন মনে করা হয় ১৯১৮ সালে ইউএসএস সাইক্লপস এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর সিস্টার শিপ প্রোটিয়াস এবং নিরিয়াসকে জার্মান ডুবোজাহাজ ডুবিয়ে দেয়। তবে পরবর্তীতে জার্মান রেকর্ড থেকে এর সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।জলদস্যুদের আক্রমণে :আবার ধারণা করা হয় জলদস্যুদের আক্রমণে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। ওই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরেরপশ্চিমাংশে এবং ভারত মহাসাগরে মালবাহী জাহাজ চুরি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। ১৫৬০ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চলছিল জলদস্যুদের আখড়া।
আরো কিছু জানতে হলে ভিজিট করুন এ সম্পর্কিত পেজ  https://www.facebook.com/btanddazzal
কিছু ছবিঃ 





 
Copyright © 2014 nayan's foundation jessore All Right Reserved
^