এত অবক্ষয় আমরা কিভাবে মেনে নিয়েছি কেউ কি বলতে পারবে?? ক্লাস ওয়ানের
বাচ্চা যখন চিকনি চামেলি আর শিলা না দেখে ভাত খায় না তখন আমরা কি আশা করতে
পারি? মেয়েটা হতে চাইবে শুটকি মাছ আর ছেলেটা চাইবে তাকে বিছানায়। এটাই
সত্যি।
মা রা যখন হিন্দি সিরিয়াল দেখেন একবার ও ভেবে দেখেছেন কি মেয়ে টা কি জানছে??? বাবাও হয়ত পরকিয়া করে এ ধারণা করে বসে থাকলে কি করবেন?? বাবা শ্রদ্ধা পাবেন?? ছেলেদের কিভাবে ঘোরাতে হয় এটা হাতে কলমে শিখতে চাইলে দোষ টা কার??
ক্যাটরিনা কাইফের খোলা বুক পিঠ দেখে বড় হওয়া ছেলে টা যখন মেয়েদের মাংস পিন্ড ভাবে কোন বাবা কি তার দায়ভার এড়াতে পারেন?
নিজের বোন মেয়েকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে বিলাই এর মত হাঁটিয়ে যখন ভোট ভিক্ষা করি কোথায় আমাদের নীতিবোধ? বিশাল বিলবোর্ডে যখন শরীর দেখিয়ে আধুনিক হই কোথায় থাকে আমাদের শ্লীলতা???
ফাইভ না পেরোতেই হাতে আসে নোংড়া বই গুলো। নাইন টেনে না আসতেই ছেলে টা স্বপ্ন দেখে সানি লিওন নিয়ে। উন্মুক্ত যুগে ছেড়ে দিয়ে তার মানসিক যত্নের কথা কি মনে থাকে? এই ছেলেই বাসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আগের দিনের ভিডিও এর কথা চিন্তা করে তার দোষ কোথায়??
পুঁজিবাদী যুগে মানুষ পণ্য। টাকা কামানোর মেশিন হওয়া ছাড়া কি শিখাই আমরা?? আমাদের বাজার বলে আজ পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খেলে তুমি বাঙালি না , তুমি সানি লিওন না চিনলে আধুনিক না , মশারি গায়ে না নিলে মেয়ে তুমি আধুনিক না আর আমরা তাই মেনে নেই। নিজেকে এতটাই সস্তা করে ফেলেছি আমরা।
আমাদের পড়াশুনা কি কিছু জানতে? শিখতে? কিছু দিতে? আমরা চাই টাকা। লাখ লাখ কোটি কোটি। যে টাকায় মেয়ে টা নিজেকে সম্মান না করে রঙ মাখবে এই আশায় তাকে দেখতে সুন্দর লাগবে। একদিন ঢোলা আর একদিন চামড়া চিপকানো পাজামা পড়বে বিজ্ঞানের সমীকরণ না বুঝে। ছেলে টা জানে সে একদিন দুটা উইকেট পেলেই তার বউ হতে চাইবে হাজার হাজার মেয়ে। চরিত্র দিয়ে হয় কি! কোন দিন পাশে বসে বাবা ভাই কি বুঝিয়ে দিয়েছেন মা কত কষ্ট করেন?? কোন দিন বলেছেন নীল আলোর জন্য না মেয়েরা না থাকলে তার জন্ম ই হত না? বোন টা কত কষ্ট করে তার জন্য টিফিনের টাকা বাচিয়ে ভিডিও গেমস কিনে দেয়?? কোন দিন ছেলেটা দেখেছে মেয়েদের কেউ মেয়ে মানুষ না ভেবে মানুষ বলেছে? কেউ কি শিখিয়েছে তুমি কারো বিষয়ে নাক গলাবে না??
কেউ ছেলেটার গালে চড় দিয়েছে কেন সে মেয়েদের গায়ের ভাজ কিংবা মেকাপের স্তর নিয়ে গবেষনা করেছে? কেন চোখ নামিয়ে চরিত্র ব্যবচ্ছেদ বাদ দেয় নি?? কেউ কোন দিন হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে বলেছে মেয়েরা টিভি স্ক্রিন আর বিছানা ছাড়া আরো অনেক খানে অনেক ভাবে থাকে?? মেয়ে মানে এঞ্জেলিনা জোলির হট ঠোঁট না , দীপিকার পিঠ না কিংবা সানি লিওনের নষ্টামি না। তোমার মা , বোন সন্তান সবাই মেয়ে। কেউ বলেছে??
কেউ কোন দিন মেয়েটাকে আয়নার সামনে থেকে নিয়ে গিয়ে মাইক্রোস্কোপ এর জগত দেখিয়েছে?? কেউ বলেছে তুমি লেডি গাগা না হলেও চলবে কারণ তুমি কাল সারা রাত ভাই টার মাথায় জলপট্টি দিয়েছ?? কেউ কি বলেছে তোমাকে আজ এক কেজি ময়দা না মাখলেও চলবে কারণ তুমি ম্যাথে ১০০ পেয়েছ?? কেউ কি বলবে তুমি আজ আনুশকার মত ড্রেস না বানালেও চলবে কারণ তুমি গুগলে জব করবে??
বলবেনা। বলেনা। আমি জানি। আমি তাই আজ মেয়ে হিসেবে ছেলেদের ঘেন্না করব না। ছেলে হলে লজ্জিত ও হতাম না। আমি মানুষ হিসেবে লজ্জিত। আমি সেই ব্যক্তি হিসেবে লজ্জিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে জেনেছে ছেলে মেয়ে দুটো আলাদা প্রজাতি। এখান থেকে শুধু ইঞ্জিনিয়ার না হট সেক্সি মেয়ে হতে চাইবার আর আপু সমাজ নিয়ে গবেষক এর মত অসুস্থ মানুষ বের হয়।
আমি ক্ষমা চাই আমার ভাই টার কাছে যে আমায় এক দলা মাংস ভাবে কারণ আমি তাকে আমার মানুষ পরিচয় দিতে পারিনি। আমার বোন টার কাছে যাকে বোঝাতে পারিনি আধুনিকতার আর এক নাম নিজেকে বাজারে বিক্রি করা না।
টি এস সি তে যারা এসব করেছে হাতের কাছে পেলে হয়ত রাগের মাথায় খুন ই করে ফেলতাম। কিন্ত তাদের মা বাবা আর সমাজ কে করতাম সবার আগে।
যে সমাজ মেয়েদের শেখায় নগ্নতা মানে আধুনিকতা আর ছেলেদের শেখায় মেয়ে ভোগের বস্ত সেই সমাজের মুখে লাথি মারি। আমি লজ্জিত এই সমাজের একজন হিসেবে।
লেখাঃ সাবিনা জামান পিংকি, রুয়েট।